তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য মানবদেহের জন্য ভয়ঙ্কর এক বিষ। এর বিষাক্ত উপাদান গুলো একবারে ক্ষতি না করে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে তাই অনেক সময়ই তামাক ব্যবহারকারীরা এর অপকারীতা সম্পর্কে উদাসীন থাকে। একটি সিগারেট বা বিড়ি তে প্রায় সাত হাজার এর ও বেশী বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থাকে, এসব যদি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হতো সাথে সাথেই মানুষের মৃত্যু হতো।
তামাকপণ্যের মধ্যে সিগারেট এর প্রচলন বেশী হলেও জর্দা, গুল, সাদাপাতা এবং নস্যি ও তামাকজাত পন্য এবং এসব আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত নেশাকারি দ্রব্য। সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে তামাক সেবনের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় চল্লিশ লক্ষ লোক মৃত্যু বরণ করছে, যার অর্থ গড়ে প্রতি দশ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তামাকের বিষক্রিয়ায়।
তামাক সেবনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস, এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এম্ফাইসিমা, সিওপিডি, ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস সহ জটিল এবং দুরারোগ্য রোগ হয়। এর মধ্যে কয়েকটি রোগের কোন প্রকার চিকিৎসাই নেই, শ্বাষকষ্ট ধুকে ধীরে ধীরে মৃত্যু বরণ করাই এর একমাত্র পরিণতি। ধুমপানের ফলে ঠোট, মুখ, দাতের মাড়ি, খাদ্যনালী, শ্বাসনালী তে ক্যন্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। এছাড়া মুত্রথলি, কিডনী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদ্রান্ত, মহিলাদের জরায়ু এবং স্তন এও ক্যান্সার হবার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে। যে কোন ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন একজন ধুমপায়ী সামান্য ঠোট, মাড়ি বা জিহবার ক্যান্সার থেকে ভয়াবহ যন্ত্রনা ভোগ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
অনেক সময় আপনি ধুমপান করেন না কিন্ত আপনার পাশের লোকটি/বন্ধু বা রুমে অবস্থান কারী কেউ ধুমপান করছে এই ধরনের পরোক্ষ ধুমপানের (passive smoking) কারনেও আপনি সমান এবং কখনো কখনো আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। তাই নিজে সুস্থ্য থাকতে হলে আশে পাশের লোকজন কেও ধুমপানে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আপনি যদি তামাকসেবী হয়ে থাকুন সবকিছু বিবেচনা করে আজই ধুমপান ত্যাগ করার সীদ্ধান্ত নিন।ধুমপান ত্যাগে আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। একজন মানুষ যত বেশী দৃঢ় ব্যক্তিত্ব(strong/attractive personality) সম্পন্ন তার পক্ষে ধুমপান ছেড়ে দেয়া তত সহজ। ধুমপান ত্যাগ করতে আপনার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সমস্যা হলে চিকিৎসক, শিক্ষক অথবা আপনার অভিভাবক বা প্রিয়জনদের পরামর্শ বা সাহায্য নিতে পারেন। আপনি প্রথমে সবাইকে জানান যে আপনি ধুমপান ছেড়ে দিতে চাইছেন, এবং এর পিছনের যুক্তিগুলোকে খুবশক্ত ভাবে মনের মধ্যে গেথে নিন তাহলেই দেখবেন ব্যাপারটা বেশ সহজ হয়ে যাবে।