- Home |
- Observation
Observation
মাদক , এই শব্দটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি ভয়াবহ ব্যাধি। মাদকদ্রব্য ধবংস করছে জীবনীশক্তি,প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ
ভাবে জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাস। মাদকবিরোধি আনন্দোল, মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসায় এক নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্ব
মোঃ ফখরুল হোসেন। মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের আধুনিক যুগোপযোগী চিকিৎসার জন্য সৃষ্টির আদিকাল
থেকে সুধী ও সুন্দর জীবনের বাসনা মানুষের চিরন্তন। নেশা তথা মাদক এই সুখী ও সূন্দন জীবনের অসন্তরায়। শুধু
তাই নয় ক্রমবর্ধমান মাদকাসক্তির কারনে নুয়ে পড়েছে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা । এ এক মারাত্মক যুব সমস্যা
যেখানে ঘরে, কর্মস্থলে, শিক্ষা প্রতিষ্টানে মাদকসক্তের মরণ খেলার আহবান ।আসক্তরা পরিবার পরিজন ও সমাজ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষতা ত্রাস পায়, জীবনের প্রতি আস্থা কমে যায়, ক্রমান্বয়ে মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, সর্বোপরি তার ব্যক্তিত্ব । তাই নেশা বর্তমান বাংলাদেশের একটি প্রধান
সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
মাদক দ্রব্য কি /মাদক কি?
উত্তেজনা ও অবসাদ সুষ্টিকারী যে সকল দ্রব্য গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক চেতনা লোপ পেয়ে নেশার সৃষ্টি করে ও
আচারনের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটে এবং তা গ্রহণের জন্য তীব্র আসক্তি সৃষ্টি করে ও অপব্যবহারের কারণ
ঘটাতে পারে এমন সব দ্রব্যকেই মাদকদ্রব্য বলে । যেমন-হেরোইন, মরফিন, গাজা ইত্যাদি।
অপব্যবহার কি?
যখন কোন সমাজে কোন মাদকদ্রব্যের ব্যবহারকে সমস্যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ)বলে মনে করা হয়, তখন তাকে
অপব্যবহার বলা হয়। যেমন-তামাকপাতা, গাঁজা, মদ, হেরোইন ইত্যাদি।
আসক্তি কি?
নিয়মিত বা মাঝে মাঝে মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে যাহা মানসিক ও শারীরিক নির্ভরতার জন্ম নেয়, বন্ধ করলে
প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ দেখা দেয় এবং ক্রমাগত নেশার প্রতি আকর্ষণ ও ব্যবহৃত মাত্রায় পরিমান দিন দিন বেড়ে
যায় ফলে তার দৈনন্দিন কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাকেই আসক্তি বলে।
মাদকশঙক্তির সঠিক কারণ নির্ণয় করা কষ্টকর ।
তবে নিম্নবর্ণিত কারণগুলো আসক্তির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে :-
*সমাজে মাদকের সহজলওঙভ্যত পারিপার্শিক ও সমবয়সীদের চাপ, *প্রতিকুল পরিবেশে যারা
অন্মতেই ভেঙ্গে পড়ে, মাদক প্রতি কৌতুহল, বেকারত্ব, *হতাশা নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্জুয়ের প্রয়াস। সহজ
আনন্দলাভের বাসনা, আর্থিক অভাব, *পরিবারে মাদকের প্রভাব, কৈশোর ও যৌবনের বিদ্রোহী বেপরোয়া মনোভাব
মাদকের কুফল সম্পকে অজ্ঞতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব, মনস্তাতিক ভুল ধারণা অপারেশনের পর ব্যথা নাশক
গষধের অব্যবহার ইত্যাদি হচ্ছে মাদকাসক্তির প্রধান ও অন্যতম কারণ । তাছাড়া ধূমপানের অভ্যাসা, ব্যক্তির
অতীত ও বর্তমান ব্যক্তিত্ব, যেমন বেশীর ভাগ মাদকাসক্তকেই অন্যলোক সহজে প্রভাবিত করতে পারে এবং চাপের
মুখে তাদের অনেকেরই শহনলীলতা কম থাকে, সন্তানের প্রতি পিতা মাতার অবহেলা ও অনীহা প্রকাশ অনেক
সময় কুফল বয়ে আনে । মস্তিষ্কে এন্ডোমরফিন সঠিক পরিমান তৈরীর অভাব ফলে দেহে অস্বস্তি হয় যা, নিজে
নিজে চিকিৎসার একটা চাহিদা জাগিয়ে তোলে পরিশেষে নির্ভরশীলতায় পেয়ে বসে। মানসিক ব্যাধির সাথেও
মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। যেমন বিষন্নতা, ম্যানিয়া, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, সজোফ্রোনিয়া ইত্যাদি। মাদকের কুফল বা
ক্ষতিকর প্রভাব/মাদক গ্রহনের পরিনতি মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলে একজন রোগী ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়।এর
ক্ষতির প্রভাব জীবনের সর্বস্তরে প্রতীয়মান হয়।
মাদকের কুফলকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়।
১।শারিরীক
২।মানসিক
৩।সামাজিক
৪।অর্থনৈতিক
৫।আধ্যাত্মিক
শারিরীকঃ ইনফেকসন যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ক্যান্সার, যক্ষা, জন্ডিস, হেপাটাটিস বি ও সি, এইডস সিফিরিস, পনোরিয়া,
এন্ডোকার্ডাইটস, খোস-পাচড়া, চুলাকানি, ফোড়া, সেপটিমেমিয়া হৃদপিন্ড-হার্ট’ ্লক, হার্টবড় হয়ে যাওয়া পাকসথলী-
অরুচি, আলসার, ক্যান্সার ,এসিডিটি প্রজনন তন্ত্র যৌনক্ষমতা ত্রাস, বন্ধ্যা। এগুলো ছাড়াও শরীরের সার্বিক রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলে যে কোন ধরনের জীবানু দ্বারা সহজেই একজন আসক্ত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়।
মাদকের প্রভাবে একজন আসক্ত ব্যক্তির আচরনগত যে পরিবর্তন দেখা যায় তা মূলতঃ মানসিক সমস্যার কারনেই
ঘটে থাকে যেমন-অমনোযোগীতা, অস্থিরতা, স্মরনশক্তি কমায়, খিটখিট মেজাজ, উত্তেজনা, উচ্ছৃঙ্খল আচরন,
মিথ্যে বলা, হতাশা, অবশাদ, অনিদ্রা, ম্নেহমমতা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। সামাজিক: পারিবারিক
অশান্তি, চুরি ডাকাতি ছিনতাই, রাহাজানি, বেকারত্ব, খুন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, অপরাধ কর্মে
লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। আর্থিক: সর্বস্বান্ত হওয়া, বিবাহিত জীবনে অশান্তি, ঝগড়া, পরিবারের মর্যাদাহানী, আর্থিক
অনটন ইত্যাদি।
আধ্যাত্মিক: একজন মাদকান্ত ব্যক্তির অন্তরে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টিকরে ৷ মনোবল কমে যায়, অলসতায় ভর পুর
থাকে, আধ্যাত্মিক ভাবে তারা অত্যান্ত নিঃস্ব হয়ে যায়। ন্যায়-অন্যায় বোধ একাকার হয়ে যায়।বিশ্বব্যাসপী তাই মাদকা
সন্তদের চিকিৎসার আধ্যাত্মিক শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়। প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ:
মাদকসক্ত ব্যক্তি যখন মাদক নেওয়া হঠাৎ বন্ধ করে বা নেওয়ার পরিমান কমিয়ে দেয় তখন শারীরিক ও মানসিক
উপসর্গ দেখা দেয়, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও দেহের জন্য ক্ষতি। তখন এ উপসর্গ এড়াতে সে মাদক গ্রহনের জন্য
মরিয়া হয়ে উঠে । ভয় পেয়ে যায় এবং মনে করে সে মরে যাবে । আসলে এ উপসর্গ কত যে মারাত্বক হবে তা নির্ভর
করে কি পরিমান এবং কতদিন ধরে মাদক গ্রহণ করে তার উপর। আফিম জাতীয় মাদকদ্রব্য (হেরোইন, মরফিন,
পেথেডিন, বুপ্রেণরপিন বা টিডিনেসিক, ফেনসিডিল বা কোডিন ইত্যাদি) থেকে সৃষ্টি প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ-
মাদক গ্রহনের তাত্র আকাম্ধা, প্রচন্ড বিষন্নতা, উদ্ভেগ প্রলাপ বকা চোখ নাক দিয়ে পানিপড়া, হাচি, ঝিমুনি,
লাফানো, হাইউঠা, পাতলা পায়খানা , বমিভাব, বমি হওয়া, পেট ব্যথা, হাত পা শরীর ঘাম হওয়া, হাড় শরীরের ব্যথা
অর্নভব করা, ভালো না লাগা দুর্বল বোধকরা , শ্বাসকষ্ট হওয়া, সমস্তশরীর শিরশির করা, গায়ের লোম খাড়া হওয়া
খিচুনী হওয়া জ্বর উত্তেজনা ও অস্থিরতা অনীদ্রা, অসংলগ্ন আচরন ইত্যাদি । এ ধরনের উপসর্গ সর্বপেক্ষা বেশী
দেখে দেয় নেশা বন্ধ করার ১২ থেকে ৭২ঘন্টার মধ্যে, তারপর ১০-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে
কমে যায়। মাদকগ্রহন হঠাৎ বন্ধ করলে অনেক সময় শারীরিক প্রতিক্রিয়া এত মারাত্মক হয় যে, মৃত্যুর সম্ভাবন ও
থাকে।মাদকাসক্ত ব্যক্তি যখন প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ কমিয়ে উঠে নতুন জীবন শুরু করতে সচেষ্ট হয় তখন
কারনে অকারনে অকম্মাৎ ভাবে কিছুদিন পর উপসর্গ ফিরে আসে । এর মধ্যে নেশায় চুম্বকের মতো মনকে টানে
ঘুমের সমন্যা ও অস্থিরতা বোধ সর্বাপেক্ষা বেশী কষ্টকর । এই উপসর্গগুলো বহ্দিন পর্যন্ত এক জন আসক্ত তাড়া
করে বেড়ায় যাহাকে আমরা বলি নেশা মুক্ত অবস্থায় হঠাৎ প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ।
মাদকসক্ত ব্যক্তিকে সনাক্তকরণ যারা নেশায় আসক্ত তাদের কিছু কিছু লক্ষন বা উপসর্গ দেখা দেয় । যে সমস্ত
রোগী নেশার কথ স্বীকার করে না, লক্ষন গুলো খেয়াল করলেই অভিভাবক গন তা অতিসহজেই অনুমান করতে
পারেন যে সে নেশায় আসক্ত। লক্ষন গুলো হল-অতিস্মপ্রতি আচরনের পরিবর্তন রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না বসে
বনে ঝিমায় রাত জেগে থাকার প্রবণতা খাওয়ার রুচি কমে যায়, ফলে ওজন কমে পুষ্টি হীনতা ভুগে, রক্তশূন্যতায়
ভূগে, বিনা কারনে অতিরিক্ত টাকা চাহিদা বাড়বে, বাড়ীর বাইরে সময় বেশীর সময় কাটায়, মুখে মুখে কাশি সবসময়
লেগেই থাকে । খিটখিটে মেজাজ, স্মৃতি শক্তি বিলোপ, মনোযোগ কমে যায়, অলসতা, হতাশা, ডিপ্রেশন, কখনও
চুপ আবার কখনও বেশী কথা বলে, আড্ডায় বেশী সময় নষ্ট করে, প্রায়ই মিথ্যা কথা বলে । ঘর থেকে দামী দামী
জিনিসপত্র বিক্রি করে নেশার টাকা যোগায়, বিলম্বে বাসায় ফিরে, বেশী করে মিষ্টি খাওয়া ও ঘন ঘন চা খাওয়া টাকা
পয়সা না পেলে বাড়ীতে নানান রকম অশান্তি সৃষ্টি হয়, সমাজ জীবন ক্ষতি গ্রস্ত হয় । ঘরের মেজেতে
ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, খালিশিশি পোড়ানো দেয়াশলাই এর চিহ্ন, ফোড়া, আলসার খোসপাচড়া, চুলকানি হতে দেখা
যায়। ছিনতাই রাহাজানি, খুন বিভিন্ন অসামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হয়। মানসিক মুলবোধের অবক্ষয় ঘটে ।
আধ্যাত্মিক ভাবে সে সব দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
মাদকাসক্তি ও পারিবাসিক অশাস্তি ও করনীয় মাদকাসক্তির ব্যক্তির পরিবার মানসিক ভাবে সামাজিক ভাবে
অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্তহয়।আসক্তি ব্যক্তির মা বাবা বাড়ীর অন্য যে কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে
যেমন এ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ, ডিপ্রেসন, মানসিক চাপ ও সামাজিক ভাবে থাকে বা আসক্ত রোগীকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন
হয়ে চলতে হয়, তদেরকে অবমুল্যায়ন করে, অর্থনৈতিক ভাবে পরিবার আর্থিক অনটনে ভূগে, টাকা পয়সা খনগ্রস্থ
হয় এমনকি রোগি চুরি ঠকবাজি একজন সদস্য মাদকাসক্ত হওয়ার অথ্য হলো ,সমগ্র পরিবারটি অসুস্থ
হওয়া,সমস্যায় জর্জরিত হওয়া, অঙ্কবভাবিক অবস্থায় পড়া ।নেশা গ্রস্ত ব্যক্তি সাথে যতদুর সম্ভাব ভাল ব্যবহার করতে
হবে, মূল্যায়ন করতে হবে,কারণ যেহেতু আসক্তি ব্যক্তি সব সময় মিথ্যা কথা বলে ফলে কম মিথ্যা কথা বলবে।
পরিবারের কাজ হলো আসক্তির সাথে খোলামেলা সমম্যার কথা আলোচনা করবে এবং প্রয়োজনে বারবার করতে
হবে,বুঝতে হবে নেশার পরিনতি এবং চিকিৎসার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সরকারী মাদক নিরাময় কেন্দ্র
,তেজগাও অথবা ভালো এনজিও কর্তৃক পরিচালিত নিরাময় কেন্দ্রে যেতে হবে এবং চিকিৎসার নিয়মাবলী অনুসরন
করতে হবে ।1মনে রাখতে হবে, আসক্ত ৩ পরিবার দু, টোই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
পুনরাসক্তি একজন মাদকাসক্ত কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে বাড়ী চলে যাওয়ার কিছু দিন পর দেখা গেল
সে আবার চিকিৎসার জন্য ফিরে এসেছে অথবা অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গেছে। এটাকেই আমরা
পুনরাসক্তি বলি। পূনরায় আসক্তি রোগীর সংখ্যা অনেক প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। এর পিছনে যে কারণ গুলো
বিদ্যমান তা অভিভাক বৃন্দের বিশেষভাবে বের করে তার সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু
আসক্তি একটি রিরাপসিং (প্রচ্ছেদ)পদ্ধতি। রোগীকে ধৈর্যসহকার আবার চিকিৎসা
চালিয়ে যেতে হবে। এর ফলে রোগী স্বেচ্ছায় চিকিৎসা গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে ও পুনরাসক্তি তীব্রতার
হার কমে আসার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়। মাদকাসক্তি চিকিৎসার মুল লক্ষ্য শুধু মাত্র মাদক প্রথা বন্ধ রাখা নয়
মানুষ হিসাবে তাকে আরো সমৃদ্ধ করা সুস্থ জীবন যাপন এবং আনুষাঙ্গিক চারিত্রিক পরিবর্তনে সহায়তা করা,
এইডস ও মাদক ও মাদক বিষয়ে গনসচেতনতা বৃদ্ধি মাধ্যমে সমাজে এগুলোর ঝুঁকি হ্রাস করা।