icon

Brain and Life Hospital – Trusted Mental Disorder & Drug Addiction Treatment Center Located at Green Road, Dhaka, Bangladesh.

Treatment

চিকিৎসা শুরু করার আগে মনে রাখা প্রয়োজন:

  • ১) মাদকাসক্ত মানেই অপরাধী নয়।
  • ২) অন্য যে কোনও রোগের মত মাদকসন্তিরও চিকিৎসা সম্ভাব।
  • ৩) সহানুভুতি এ সমবেদনার কোনও বিকল্প নেই।
  • ৪) শুধু চিকিৎসকের দায়িত্বে ছেড়ে দিলে চলবে না, পরিবারের সহযোগীতা অবশ্যই প্রয়োজন।
  • ৫) কোনও অবস্থাই হাল ছেড়ে দেওয়ার মত নয়, মাদকাসক্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভাব।
  • ৬) মাদকাসকন্তকে দোষারোপ করা, বা এমন কোনও কথা বলা যা তার মধ্যে হতাশা বা হীনমন্যতার সৃষ্টি করতে পারে …. তাকে বেশী করে মাদকাসক্তির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।
  • ৭) মাদকসক্তির কোনও Shortcut চিকিৎসা নেই।
  • ৮) সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং সময় দিতে হবে।
  • ৯) মাদকাসক্তির আধুনিক চিকিৎসা অতিরিক্ত ব্যায়বহুল নয়।
  • ১০) শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহনীয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনার প্রিয়জন মাদকাসক্ত কিনা?

 

সাধারণতঃ দৈনন্দিন জীবন যাপনের ব্যস্থতার মধ্যে অনেক সময় পরিবারের তরুণ সদস্যদের প্রতি নজর রাখা সম্ভব হয় না, বিশেষতজ্ঞঃ কমবয়ষের তরুণ-তরুণী, কিশোর -কিশোরী, আজকের দিনে অনেকটা সময় বাড়ী বাইরে কাটায়। অভিভাবেকেরা নিশ্চিত থাকেন এই ভেবে যে তারা তাদের লেখাপড়া, টিউশন, খেলাধূলা, বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত আছে। কিন্তু তাঁরা যদি সামান্য সজাগ থাকেন তাহলে হয়তো অনেক বিপদ এড়ানো যায়, কারণ মাদকাসক্তির লক্ষণ গুলো শুরুতে বোঝা যায়। চালচলন, ব্যবহার বাচনভঙ্গির পরিবর্তন নিকট আত্মীয়দের পক্ষেই ধরা সম্ভব।

ব্যবহার চালচলনে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে মাদকাসক্তের মধ্যে, তার একটি তালিকা নীচে দেওয়া হল:

* ক্ষুধা হ্রাস বা বৃদ্ধি

* হঠাৎ ব্যস্ততার বৃদ্ধি বা বিনা কারণে ব্যস্ত ভাব দেখানো
* বেলী কথা বলা

* খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

* নতুন নতুন বন্ধ

* ব্যক্তিত্বের মধ্যে পরিবর্তন * আগে যে সমস্ত জিনিসে বা বিষয়ে আগ্রহ ছিল, সেসকল বিষয়ে অনাগ্রহ
* লেখাপড়া বা কাজের মানের অবনতি

* স্মরন শক্তি কমে যাওয়া, মনঃসংযোগের অভাব

* সামান্য কারনে উত্তেজিত হয়ে চেঁচামেচি করা

* উৎসাহের অভাব….. সব কিছুতে কি হবে প্রশ্ন

* আত্মপ্রত্যয় ও আত্মসম্মান বোধের অভাব

* অল্পতেই মেজাজ গরম করার প্রবনতা .

* অকারন উত্তেজনা, রাগ হতাশা, বা উদ্বিগ্নতা

* বেপরোয়া (Don’t Care) ভাব

* অস্বাভাবিক ব্যবহার, বোকা বোকা বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা

* সন্দেহবাতিক

* সবসময় নিজের জিনিস পত্র লুকিয়ে রাখা বা নিজের ঘর তালাবদ্ধ রাখা

* গোপন করার চেষ্টা বা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া।

* হঠাৎ বেশী টাকার প্রয়োজন (বাড়ীতে ছোট ছোট গহনা বা খুচরো টাকা চুরি..যাতে সাধারণতঃ কাজের লোককেই সন্দেহ করা হয়)

* বাড়ী আসা, যাওয়া খাওয়া ঘুম ইত্যাদি Routine এর পরিবর্তন

বাংলাদেশ সবচাইতে বেশী প্রচলিত মাকদ্রব্য হিসাবে গাঁজা, ফেনসিডিল এবং হেরোইনকেই ধরা হয়। ফেনসিডিল (বা এ জাতীয় )প্রকৃত পক্ষে একটি Cough expectorant বা কাশী সারানোর ওষুধ। কিন্তু তাদের মধ্যে একটি উপাদন “কোডিন” (Codeine) তৈরী হয়। আফিম (Opium) থেকে । এই “কোডিন” একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঔষুধ ব্যাথা যন্ত্রনা জ্বালা ইত্যাদি । শারিরীক কষ্টের উপশমের জন্য। বিস্তু বেশী মাত্রায় সেবন করলে এ “কোডিন’” একটি নেশার বস্তুতে পরিণত হবে। হেরোইন একটি নিষিদ্ধ মাদক এবং এরও উৎস ই একই আফিম। আফিম থেকে প্রস্তুত সকল মাদক দ্রব্য বা গুষধকে বলা হয় Opioid agonist যা মস্তিষ্কের একটি বিশেষ জায়গায় মানুষকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পৌছে দেয়। আপনার করনীয়ঃ আপনি যখন প্রথম জানতে পারেন যে আপনার প্রিয় জন মাদকাসক্ত, স্বাভাবিকভাবেই আপনার নিজর মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা ক্রোধ ও হতাশার মিশ্রণ । এ সময় মাদকাসক্তকে বকাবকি করা বা শারিরীক শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবাও আপনার পক্ষে সমৃভব। কিন্তু মনে রাখবেন তাতে ফল বিপরীত হতে পারে। মনে করুন আপনার কোন নিকটত্মীয়র TB বা অনুরুপ কোন কঠিন ব্যাধি হয়েছে … আপনি কি তাকে বকাবকি করবেন? এক্ষেত্রেও আপনাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এবং পরবর্তী করণীয় কি তা স্থির করতে হবে।

আপনার যা করণীয়:

* আপনাকে কিছু সময় মাদকাসক্তর জন্য (দিনাস্তে একবার হলেও) ব্যয় করেতে হবে। ধৈর্য্য ধরে শুনতে হবে তার কিসমস্যা।

* তার ভাল গুনগুলিকে প্রশংসা করতে হবে ।

* তার যে Hobby গুলি ছিল (বা এখনও আছে), তাতে উৎসাহ দিতে হবে ।

* আপনার নিজের যদি কোন নেশা থাকে (ধুমপান বা মদ্যপান),  সেটি ত্যাগ করতে পারলে খুবই ভাল, কারন সে  ক্ষেত্রে আপনি নিজেই একটি উদাহরন স্বরুপ হয়ে যাচ্ছেন তার কাছে।

* আপনার পরিবারের মধ্যে অপ্রীতির আবহাওয়া বজায় রাখতে হবে, মাদকাসক্ত আত্মীয়র মধ্যে একাত্মবোধ  জাগাতে হবে।

* সে যে পরিবারের একজন গুরুত্ব পূর্ণ সদস্য সেটা বোঝানোর চেষ্ঠা করুন।

* খুব বেশী কড়াকড়ি বা নজরবন্দীর করে রাখার চেষ্টা করবেন না ,তাতে মাদকাসক্তর মনের মধ্যে প্রতিরোধ তৈরী হবে।

* মনে রাখবেন গুষধের সাথে পরিবারের সকলের ঘনিষ্টতা ও ভালবাসা মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়।

রোগীকে চিকিৎসা নেওয়ার ঊদ্বুদ্ব করন: অর্থাৎ রোগীকে চিকিৎসার জন্য রাজী করানো। এজন্য রোগীর ব্যক্তি মর্যাদাকে মূল্যায়ন করতে হবে। কোন কঠিন কথা বলা যাবে না, যাতে তার মনে আঘাত লাগে।চিকিৎসা কেন নেবে তার কারণ বুঝিয়ে বলতে হবে, না নিলে কি হবে তাও বলতে হবে, যাতে তার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে উদ্‌ধুদ্ধ করনের সময় আসক্ত ব্যক্তির কথা ওসমস্যা ধৈঁয সহকারে শুনতে হবে তার সমস্যা করুনার চোখে দেখাই উত্তম এবং সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করাই সবচেয়ে ভাল।চিকিৎসার স্বার্থে পাঠানোর জন্য কর্মীকে অনেকদিন উদ্ধুদ্ধ করন কাজটি করতে হতে পারে। সুতরাং মাদকাসক্তকে আপনার কথা উপলব্ধ বা জেনে নিতে সময়দিন।আসক্ত ব্যক্তির কিছু দুর্বলতা, আগ্রহ বা দুশ্চিন্তার বিষয় থাকে সে গুলোকে চিহ্নিত করে সেই সূত্রে ধরে তাকে চিকিৎসায় রাজী করানোর ব্যাপারে কথা বলুন এবং এতে চিকিৎসার জন্য রাজী করানো সহজ।আবার উচ্চ শিক্ষার জন্য বা ভালো কাজের জন্য দেশের বাইরে যাবে এরকম সমস্যা বললে মাদকাসক্তকে চিকিৎসার জন্য উদ্ধদ্ধ করা সহজ। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়ঙ্কজন মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সমাজ কল্যাণ কর্মীর চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ জন্য রোগীকে সরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অভিভাবকসহ রোগীকে পাঠানো যেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, যে কোন সমাজের যুব সম্প্রদায়-ই হচ্ছে সমস্ত প্রাণ শক্তির উৎস। এই প্রাণ শক্তি অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।চিত্তবিনোদন খেলাধূলা, শারীরিক প্রশিক্ষন,বিভিন্ন প্রতিযোগীতা প্রভৃতির মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়কে সহযোগীতামুলক ব্যবহার, শিক্ষাদান এবং কর্মব্যস্তার মাধ্যমে জীবনের এক ঘেয়েমি থেকে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। যে সকল ব্যক্তি আসক্তির মরণ গ্রাসে নিপতিত হয়েছেন তাদের জন্য চিকিৎসা অত্যাবশ্যকীয়। আ্যালকোহল এনোনিমাস ও নারকোটিক এনোনিমাস এর মতো সংগঠনগুলো আসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক ও ব্যক্তগত ভাবে প্রতিরোধ পড়ে তোলার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। তওবা প্রভৃতির মত ধর্মীয় অনুশাসনও এ ব্যাপারে বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারে। মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতাগণ, চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সিলার, এক্স-এডিক্ট ও সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিবর্গের সহযোগীতায় পূর্নবাসন কর্মসূচীতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

গবেষণা ও গ্রন্থনা: ডাক্তার মহাদেব চন্দ্র মন্ডল আর.পি. সিটিসি, ঢাকা প্রকাশনা ও প্রচার: ইস্কাটন মডার্ণ হেলথ কেয়ার যোগাযোগ ঠিকানা: ৭৬,ইস্কাটন রোড, রমনা, ঢাকা-১০০০